পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং নিয়ে ইতিমধ্যে “পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কি? যে ৭টি উপায়ে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করতে পারেন” শিরনামে একটি নিবন্ধ লিখেছি।আজ বলবো পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের কিছু পূর্ব প্রস্তুতির কথা। কেননা ব্র্যান্ডিং করা হয় প্রতিষ্ঠান বা সেবার কাঙ্ক্ষিত ভোক্তা বা সেবা গ্রহীতার কাছে পরিচিত করে তোলার জন্য। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বা সেবাই যদি থাকে অসম্পূর্ণ তাহলে ব্র্যান্ডিং করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে আপনার প্রতিষ্ঠান সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে, যা কখনোই কাম্য নয়। তাই পূর্ণমাত্রায় ব্র্যান্ডিং করার আগে নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করে প্রতিষ্ঠান এবং সেবার সাম্প্রতিক অবস্থা নিরুপণ করুন।
আপনি যদি সাফল্য পেতে চান আপনাকে ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব বুঝতেই হবে।
০১. কী প্রয়োজন?
প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিংয়ে যাওয়ার আগে এই প্রশ্নটি নিজেকে করুন। কেননা ব্র্যান্ডিং করলে প্রতিষ্ঠান বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে পরিচিত হবে। তাই তার আগে দেখে নেওয়া দরকার প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ কিনা। প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ করতে আর কী কী প্রয়োজন তার তালিকা তৈরি করুন এবং ব্র্যান্ডিংয়ে যাওয়ার আগে প্রয়োজনগুলো মিটিয়ে নিন।
আপনার প্রত্যাশার ধরণ বুঝে ব্র্যান্ডিং করতে হবে, তাহলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাবেন।
০২. প্রত্যাশা কী?
ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্দেশ্য কী? ব্র্যান্ডিং করে কী প্রত্যাশা পূরণ করতে চান? আপনার প্রত্যাশার ধরণ বুঝে ব্র্যান্ডিং করতে হবে, তাহলে কাঙ্ক্ষিতসাফল্য পাবেন। যেমন কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্দেশ্য থাকে শুধু মাত্র পরিচিতি পাওয়া। কারো উদ্দেশ্য থাকে এলিট হয়ে ওঠা, কারো উদ্দেশ্য থাকে ব্র্যান্ডিংয়ের সাথে সাথে মার্কেটিং। তাই বড় প্রতিষ্ঠান সবসময় নিজেদের প্রত্যাশার কথা মাথায় রেখে ব্র্যান্ডিং করে। তাই ব্র্যান্ডিংয়ে যাওয়ার পূর্বে নিজেদের প্রত্যাশার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া জরুরী।
০৩. সাফল্যের সংজ্ঞা কী?
আপনার কাছে সাফল্যের সংজ্ঞা কী? এই প্রশ্নের উত্তর ব্র্যান্ডিংয়ের যাওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া সবচেয়ে বেশি জরুরী। কেউ কেউ মনে করেন শুধু টাকা আয় করাই সাফল্য। আবার কেউ মনে করে শুধু আয় না সাথে সম্মান অর্জনও জরুরী। কেউ খুব দ্রুত সাফল্য চায়, কেউ টেকসই আয় নিশ্চিত করাকে সাফল্য জ্ঞান করে।
আপনি যে দৃষ্টিভঙ্গিতে সাফল্য বিচার করেন, আপনার ব্র্যান্ডিং কৌশলও নিশ্চয় তেমন হবে!
আপনি যে দৃষ্টিভঙ্গিতে সাফল্য বিচার করেন, আপনার ব্র্যান্ডিং কৌশলও নিশ্চয়ই তেমন হবে! তবে নিজের মত যা খুশি তাই ভাবলে চলবে না। নিজের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রধান্য দিয়ে একটি স্টান্ডার্ড মেনে টেকসই আয়ের কথা মাথায় রেখে ব্র্যান্ডিং কৌশল নিধারণ করা উচিত। না হলে মাঝপথে গিয়ে সব নিরর্থক মনে হতে পারে।
০৪. আপনি কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ?
আপনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ শুধু মাত্র সেই বিষয়ের ব্র্যান্ডিং পরিকল্পনা আপনার পক্ষে মানায়। না হলে ব্র্যান্ডিং করে যাবেন ঠিকই কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড হয়ে উঠেবে না। তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে ব্র্যান্ডিং পরিকল্পনা করুন। তবে নিয়মিত কাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে অভিজ্ঞ করে তোলাও জরুরী, যেন পরবর্তীতে কর্মকৌশল নিধারণ করতে অন্য কারো সহযোগিতা নিতে না হয়।
আপনার ব্যবসার ফোকাস কি সেটা জেনে বুঝে এগোনো সবেচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
০৫. ফোকাস কী?
আপনার ব্যবসার ফোকাস কী সেটা জেনে বুঝে এগোনো সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। যেমন একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো পণ্য থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সবগুলো পণ্য নিয়ে ব্র্যান্ডিং করে না। সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কিছু ‘কি (Key) প্রোডাক্ট’ থাকে। সেই কি প্রোডাক্টগুলো দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্র্যান্ডিং করে থাকে। এই পদ্ধতির ব্র্যান্ডিং সব পণ্য বা সেবা নিয়ে ব্র্যান্ডিংয়ের চেয়ে বেশি ভালো ফল দেয়। কাজেই ব্র্যান্ডিং শুরু করার আগে ব্যবসার ‘কি প্রডাক্ট বা সেবা’ নির্ধারণ করুন। এভাবে ব্র্যান্ডিংয়ের ফোকাস নির্ধারণ করে নিলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাওয়া যায়।
০৬. প্রধান সামর্থ্য কী?
কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পেতে আপনি কী কী করতে সক্ষম তার একটি তালিকা তৈরি করুন। সেই তালিকার ভিত্তিতে ব্র্যান্ডিং কৌশল পরিকল্পনা করুন। কেননা সাফল্য সবসময় আপনার সক্ষমতার উপর নির্ভর করে। ব্র্যান্ডিংয়ের অনেক চমৎকার পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন সামর্থ্যের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে। কাজেই সামর্থ্য বুঝে ব্র্যান্ডিং কৌশল নির্ধারণ করুন, তাতে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
পণ্য বা সেবার সাথে নতুন আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক এক বা একাধিক ফিচার যোগ করুন যা হয়ে উঠবে আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
০৭. বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য?
আপনার পণ্য বা সেবার বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য আছে যা একই জাতীয় অন্য প্রতিষ্ঠানের নেই। খুঁজে বের করুন আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য যা ক্রেতা বা সেবা গ্রহীতার মনে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করতে সক্ষম। যদি এমন কোনো বৈশিষ্ট্য না থাকে তবে সৃষ্টি করুন। পণ্য বা সেবার সাথে নতুন আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক এক বা একাধিক ফিচার যোগ করুন যা হয়ে উঠবে আপনার প্রতিষ্ঠানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এরপর সেই বৈশিষ্ট্যকে ফোকাসে রেখে ব্র্যান্ডিং করুন, সাফল্য প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাবে।
আপনি যদি সাফল্য পেতে চান আপনাকে ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব বুঝতেই হবে। আর ব্র্যান্ডিংয়ে যাওয়া আগে এমন কিছু পূর্ব প্রস্তুতিও নিতে হবে যেন ব্র্যান্ডিং বৃথা না যায়। স্বল্প খরচে বেশি পরিচিতি পাওয়া যায় বা বাজার ধরা যায় সেই কথা মাথায় রেখে সব পরিকল্পনা সাজাতে হবে। আমার বিশ্বাস উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো মাথায় রাখলে কম খরচে কাঙ্ক্ষিত ব্র্যান্ডিং সহজ হবে।
Collected
Diamu Blog Team