শীঘ্রই আমার সাকসেস স্টোরি মালয়েশিয়ার পত্রিকা তুলে ধরবে : সাফিয়া শামা
বিয়ের পর সাফিয়া শামা থাকতেন গ্রিন রোডে। সময়টা ২০০৫ সাল। বাড়িতে বসে নিজেই কিছু একটা করার শখ হয় তার। একটি সেলাই মেশিন আর ৪ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে সালোয়ার-কামিজ তৈরির মাধ্যমে শুরু করেন বুটিক ব্যবসা। যদিও ২০০৩ সালে ফ্যাশন হাউস বাংলার মেলার ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হকের সহকারী ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন তিন বছর। প্রাইড টেক্সটাইলে ডিজাইনার হিসেবেও কাজ করেন দু’বছর। কয়েক বছর কাজের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে শুরুটা ভালোই হয়েছিল শামার। ঘরে বসেই সালোয়ার-কামিজ তৈরি করে বড় বড় শোরুম এবং প্রাইড টেক্সটাইলে সরবরাহ করেন। প্রথমে একজন কর্মচারী নিয়োগ দেন। একজন কর্মচারীতে না হলে কর্মচারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাসায় জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ২০১০ সালে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় একটি ছোট্ট কারখানা দেন। বাংলাদেশজুড়ে তার তৈরি কাপড় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। ২০০৯ সালে হোম ডেকর আইটেম বেডকভার, বেডশিট, চাদর, পর্দা ইত্যাদি তৈরি করে মালয়েশিয়ায় রফতানি করেন। ২০১৪ সালের শেষে জুট অ্যান্ড লেদারের পণ্য তৈরি শুরু করেন। সফল নারী উদ্যোক্তা সাফিয়া শামা পাটজাত বহুমুখী পণ্যকে নতুনভাবে উপস্থাপন করে পাটের গুরুত্ব দেশ-বিদেশে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে, তিনি বলেন, পাট নিয়ে নতুনভাবে কাজ করছি। তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য পাটের তৈরি পণ্য নিয়ে বেসরকারি সংস্থা কেয়ার বাংলাদেশ এবং সুইস এশিয়া প্রোগামের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করেছি। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেব, কীভাবে পাটজাত উন্নতমানের পণ্য তৈরি করা যায়। তারা প্রশিক্ষিত হয়ে মাঠ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেবেন। এছাড়া আমি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সঙ্গে ওদের গিফট আইটেমের কাজও করছি। আমার পাটজাত তৈরি পণ্য নেদারল্যান্ডসে রফতানি করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে দর্শনে এমএ করেন সাফিয়া শামা। এরপর সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ থেকে নারী উদ্যোক্তা, ডিজাইনিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। বিশ্বখ্যাত আমেরিকার ডিজাইনার এলাইনির কাছ থেকে সপ্তাহ খানেকের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের ফ্যাশন ডিজাইনার চন্দ্রশেখর সাহার কাছে হাতে-কলমে কাজ শেখেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৪ সালে পেয়েছেন ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস এবং সাউথ ইস্ট ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে শ্রেষ্ঠ নারী উদ্যোক্তা সম্মাননা।
মায়ের ইচ্ছে দুই মেয়ে নিজেরাই কিছু করে স্বাবলম্বী হোক : ফরিদা আখতার জাহান
এআইবি থেকে ২০০৪ সালে বিবিএ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন ফরিদা আখতার জাহান। পাশাপাশি এমবিএও করেন। অন্যের অধীনে মেয়ে চাকরি করবে এটা মা সাজেদা বেগমের পছন্দ নয়। তার ইচ্ছা দুই মেয়ে নিজেরাই কিছু করে সাবলম্বী হোক। মায়ের ইচ্ছা পূরণে বড় বোন রাইসা ফারহানা ঘরে বসেই বুটিকের কাজ শুরু করেন। বড় বোনের কাজ দেখে ফরিদাও এ কাজে উৎসাহী হন। চাকরি ছেড়ে ২০০৮ সালে রেডিয়েন্ট ইন্সটিটিউশন অব ডিজাইন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং এর ওপর এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করেন। এ বিষয়ে ফরিদা আখতার জাহান বলেন, প্রশিক্ষণকালীন সময়ে রেডিয়েন্ট ইন্সটিটিউশন অব ডিজাইনের চেয়ারপার্সন গুলসান নাসরীন চৌধুরী ম্যাম আমাদের পরামর্শ দিতেন, কীভাবে প্রোডাক্ট আরও ভালো করা যায়। এজন্য ফেব্রিক্স, প্যাটার্ন, কাটিং, ডিজাইন, কালার সিলেকশন এবং মোটিফের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া। তার কাছেই হাতে-কলমে এসব খুটিনাটি বিষয়গুলো আয়ত্ব করি। মায়ের সহযোগিতায় প্রথমে দু’বোন ৫০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে সেলাইবিহীন থ্রি-পিস, শাড়ি, বিছানার চাদর তৈরি করতাম। সেসব থ্রি-পিস, শাড়ি, বিছানার চাদর পরিচিতদের কাছে বিক্রি করতাম। তারা বাড়িতে এসেই কিনে নিতেন। পোশাকের চাহিদা বাড়লে দু’বোন মিলে ২০০৯ সালে ঢাকার ধানমণ্ডিতে একটি বুটিক হাউস দিই। বুটিক হাউস দেয়ার পর বাসায় কারখানা দিই। সেখানে প্রথমে একজন কারিগর কাজ করতেন। এখন চারজন কারিগর কাজ করেন। বুটিক হাউস ছাড়াও বৈশাখী মেলায় আমাদের তৈরি পোশাক নিয়ে অংশ নিই। পাইকারি বিক্রি হয়।
তিনজন থেকে কর্মী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ত্রিশে : রিগেলিয়া দে দিপা
বরিশালের মেয়ে রিগেলিয়া দে দিপার কলেজে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায়। এইচএসসি পাস করার পর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আর এগোয় না। কিন্তু স্পোকেন ইংলিশ, কম্পিউটার, ব্লক-বাটিক, অ্যামব্র“শ ইত্যাদির ওপর প্রশিক্ষণ নেন। বিডি জবসের কাস্টমার কেয়ার কোর্সও সম্পন্ন করেন। ঢাকায় র্যাংগসে এইচ আর ডিপার্টমেন্টে ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার পদে চাকরি নেন। এ সময় পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন রেডিয়েন্ট ইন্সটিটিউশন অব ডিজাইনে ইকেবানার ওপর প্রশিক্ষণ দেবে। ২০০৭ সালে তিনি তিন মাস করে দুটি ইকেবানার কোর্স করেন। প্রথম কোর্স করেন সওকা, দ্বিতীয়টি ফ্রি স্টাইল। ইউনেস্কো ক্লাবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ইকেবানা প্রতিযোগীরা অংশ নেন। রিগেলিয়াও এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তিনি উপস্থাপন করেন পিতলের ট্রেতে সুরাদানিতে মুক্তার মালার অলংকরণ। এর ওপর ইকেবানা ডেকোরেশন করে রাজা-বাদশাহদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরেন। তিনি দৃক গ্যালারিতে রেডিয়েন্ট থেকেও অংশ নেন। পেশা হিসেবে কীভাবে শুরু করলেন জানতে চাইলে রিগেলিয়া দে বলেন, বিয়ের কারণে পড়াশোনা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্ন পূরণেই ২০১০ সালের দিকে ইকেবানা ফ্লাওয়ার বুকে তৈরি করা শুরু করি। এই ইকেবানা ফ্লাওয়ার বুকে র্যাংগস কর্পোরেটের বিভিন্ন প্রোগামে সরবরাহ করি। খরচ বাদ দিয়ে শতকরা ২০ ভাগ লাভ থাকত। ফ্লাওয়ার বুকের রং, পট ইত্যাদি বাছাই করে থিম অনুযায়ী ইকেবানা ডেকোরেশন করতাম। ২০১১ সাল থেকে ইকেবানা ব্যবহার করে ওয়েডিং স্টেজ সাজানো শুরু করি। প্রথম দিকে ওয়েডিং স্টেজ সাজাতে তিনজন কর্মী নিই। সব খরচ বাদ দিয়ে ২৫ আর ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়।
Collected
Source: The Daily Jugantor
13th April 2015
Diamu Blog Team