উদ্যোম ও নিবিড় প্রচেষ্টায় খুব বেশি পেছনে তাকাতে হয়নি। দেশে ফেইসবুকে প্রথম চামড়াজাত পণ্য বিপণনের প্রতিষ্ঠান সিভি স্ট্রিট এখন প্রতিষ্ঠিত এক উদ্যোগ।
কুমিল্লার ছেলে কামরুল হাসান ইমন ২০১২ সালে ইউনাইটেড ইন্ট্যারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করেন। অন্যসব উদ্যোক্তার মতো চাকরির পরিবর্তে এগিয়ে নিতে চাইলেন নিজের উদ্যোগকে। পরিবারের বাধা ডিঙ্গিয়ে পুরোদমে নেমে পড়লেন কাজে। উদ্যোম ও পরিশ্রমের মাধ্যমে এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পণ্য রফতানি করছে তরুণ এ উদ্যোক্তার ফেইসবুকভিত্তিক উদ্যোগ সিভি স্ট্রিট।
শুরুটা হয়েছিল ২০১১ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সেই সময়টাতে শুরু করেছিলেন ফেইসবুকভিত্তিক উদ্যোগ সিভি স্ট্রিট। সঙ্গে ছিলেন মইনুল হাসান টিটু। দু’জনে মিলে শুরু করেন অনলাইনে লেদার পণ্য বিক্রির এ উদ্যোগ। সময়ের পরিক্রমায় ফেইসবুক ছাড়িয়ে একটি আউটলেটও গড়ে তুলেছেন তরুণ এ দুই উদ্যোক্তা। সিভি স্ট্রিটের পণ্য রফতানি হচ্ছে বিদেশে। সামনে রয়েছে অপার স্বপ্ন।
পরিকল্পনা
ছোটবেলা থেকে ইমনের ইচ্ছা ছিলো ব্যবসা করার। একই সঙ্গে ফ্যাশন নিয়েও অনেক আগ্রহ ছিল তার। অবশেষে ২০১১ সালে ইন্টারনেটের ঘাটাঘাটি করতে করতে গিয়ে এ বিষয়ে একটি আইডিয়া পান। দেখলেন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে ভিন্নভাবে ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে। ফেইসবুক ও ইন্টারনেটভিত্তিক বাণিজ্য তথা ই-বাণিজ্য তখনও ততটা জনপ্রিয় হয়ন। তবে এটি যে সম্ভাবনাময় সেটি বুঝেছিলেন। একটি সামগ্রিক ফ্যাশন হাউজ গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করলেন।
সিভি স্ট্রিটের পথচলা
বিনিয়োগের জন্য মূলধন কম থাকায় একা শুরু করা ইমনের জন্য ছিল কষ্টকর। তাই স্বপ্নের ব্যবসাকে বাস্তবে রুপ দিতে ব্যবসায়িক অংশীদার খোঁজা শুরু করলেন তিনি। সে সময় এগিয়ে এলেন টিটু। দু’জনে মিলে ২০১১ সালের শুরুর দিকে নানা পরিকল্পনা করেন। বিনিয়োগ কম হওয়ায় সিদ্ধান্ত নিলেন চামড়ার পণ্য নিয়ে কাজ শুরুর। পেয়েও গেলেন একটা ভালো মানের কারখানার খোঁজ পান।
মূলধন কম থাকায় পরিকল্পনা মতো ফেইসবুকের মাধ্যমেই শুরু করলেন ব্যবসা। ‘সিভি স্ট্রিট বিডি’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজ খুলে বিক্রির পাশাপাশি একটি খুচরা পণ্য বিক্রির দোকানে (রিটেইল স্টোরে) পণ্য সরবরাহ শুরু করলেন।
ধীরে ধীরে আরও কিছু রিটেইল স্টোরে পণ্য সরবরাহের কাজ পান তারা। ওই বছরের শেষের দিকে ই-কমার্স সাইট এখনই ডটকমের সঙ্গেও পণ্য সরবরাহের চুক্তি করে সিভি স্ট্রিট। ক্রমে বাড়তে থাকে বিক্রি, মূলধনও জোগাড় হতে থাকে। এগিয়ে যায় পথচলা।
মূলধনের অভাবে প্রথমে লেদার পণ্য দিয়ে শুরু হলেও পরে শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, প্যান্টসহ নানা ধরণের পণ্য যুক্ত হয়েছে সিভি স্ট্রিটের তালিকায়।
ডিজাইন নকল প্রধান সমস্যা
চাকরির পরিবর্তে ব্যবসায় নামায় প্রথম থেকে পারিবারিক বিরোধিতার মধ্যে পড়তে হয়েছে পরিবারের ছোট ছেলে ইমনকে। তবে সফলতা আসায় এখন কিছুটা নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছেন অভিভাবকরা। বন্ধুদের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলেও অনেকেই নিরাশার কথা শুনিয়েছে। তবে সবসময় আশা জাগিয়েছেন ক্রেতারা।
ক্রেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে কিছু ই-কমার্স সাইট ও ফেইসবুক পেইজ সিভি স্ট্রিটের হুবহু অনুকরণ করছে। স্লোগান ও পেইজে পণ্যের একই রকম বিবরণ দেওয়ায় ক্রেতারা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন বলে অভিযোগ ইমনের। তার মতে সিভি স্ট্রিট দেশে প্রথম লেদার পণ্যের অনলাইন বিপণন শুরু করে। তাই অনেকেই এটির ডিজাইন নকল করছে। ফলে প্রতিনিয়ত ডিজাইন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। তবে বিষয়টিকে অনেকটা ইতিবাচক হিসেবেও দেখছেন তিনি। কারণ এর মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে যে সিভি স্ট্রিটের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
হয়েছে নিজস্ব শো–রুম
দেশের ই-কমার্স সাইট, রিটেইল স্টোরে পণ্য সরবরাহ করা ছাড়াও সিভি স্ট্রিটের বেশ কিছু পণ্য দেশের বাইরেও রফতানি হচ্ছে। গত বছরের এপ্রিলে রাজধানীর ধানমণ্ডির জিগাতলাতে নিজস্ব শো-রুম চালু হয়েছে।
প্রচারণা
প্রচারনার ক্ষেত্রে ফেইসবুক বিজ্ঞাপনকেই বেশি প্রাধান্য দেন ইমন। পাশাপাশি লিফলেটের মাধ্যমেও প্রচার কাজ চলে। শুরুতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগের কারণে বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে ভালো কাভারেজ পেয়েছে সিভি স্ট্রিট। এটি প্রচারের ক্ষেত্রে বেশ ভূমিকা রেখেছে বলে জানা তিনি।
দেশের বাইরে আউটলেট খোলার পরিকল্পনা
আগামীতে সিভি স্ট্রিটকে আরও সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি দেশের বড় শহরগুলোতে পর্যায়ক্রমে আউটলেট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। চলতে বছরে ঢাকায় আরও দুইটি আউটলেট খোলার জন্য কাজ করছে সিভি স্ট্রিট। আর দেশের বাজারে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের বাহিরেও আউটলেট খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এ কারণে পণ্যের গুনগত মান ও ফ্যাশন ঠিক রেখে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
নতুন উদ্যোগ শুরু করতে পরিকল্পনাই হলো বড় বিষয়। পরিকল্পনা সঠিক হলে অর্থের সমস্যাটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই। সব চেয়ে বড় বিষয় হলো- এখনও অনলাইন মার্কেট অনেক ছোট, সেই হিসেবে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। তাই অনলাইনে কোনো পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে অবশ্যই মান এবং সেবার ব্যাপারটি মাথার রাখতে হবে। মার্কেট ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে ব্যবসায় নামার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
(Collected)
Diamu Blog Team