পরিসংখ্যানগত বিষয়ে অনেকের আপত্তি থাকতে পারে তবে এটাই সত্য যে পরিসংখ্যান সিদ্ধান্তের দিক নির্দেশক। একটি সার্ভে প্রতিষ্ঠান ২০০জন নতুন উদ্যোক্তাদের সাফল্য এবং ব্যর্থতা নিয়ে স্ট্যাডি করে দেখিয়েছে যে প্রায় ৫০ভাগ উদ্যোক্তাই অসফল। আবার এই ৫০ভাগ সফল উদ্যোক্তদের মধ্যে ৪৫ ভাগ উদ্যোক্তাই নানা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে সফলতা অজর্ন করেছে। অবশ্যই একজন প্রকৃত উদ্যোক্তা ব্যবসায় ব্যর্থতাকে সাফল্যের পথে একটি মাইলস্টোন বলে মনে করে। তারা ভুল থেকে শিক্ষা নেয় এবং ভুলগুলো তাদেরকে ব্যবসায়ী হিসেবে আরো বেশী পরিণত করে পাশাপাশি নতুন আইডিয়া নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী উত্তীর্ণ এই ৪৫ভাগ উদ্যোক্তাই প্রকৃত উদ্যোক্তা ছিল। পাশাপাশি এই পরিসংখ্যান একজন নতুন উদ্যোক্তার ব্যর্থতার দশটি গুরুত্বপূর্ণ কারণও চিহ্নিত করেছে। এটি প্রাথমিক ভাবে প্রত্যেক উদ্যোক্তার জন্য খুব জরুরি বিষয়।
১. কোন লিখিত প্লানিং না থাকা
নির্দিষ্ট লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কিংবা দিক নির্দেশনা ছাড়া একজন উদ্যোক্তা সফল হতে পারে না। একজন উদ্যোক্তা কি করতে চায়, কিভাবে করতে চায়, কত সময়ের মধ্যে করতে চায়, কোথায় পৌঁছুতে চায় এই টোটাল বিষয়গুলো একটা কংক্রিট লিখিত প্লানিংয়ে এর মধ্যে আনলে উদ্যোক্তার জন্য পৌঁছানো সহজ হতে পারে।
২. কোন মডেল না থাকা
একজন নতুন উদ্যোক্তা অবশ্যই নবীশ। তাকে নানান বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে শিখতে হয়। এ ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ কোন সফল উদ্যোক্তাকে অনুসরণ করতে পারেন বা বিশেষ কোন সফল প্রতিষ্ঠানকে তার মডেল হিসেবে বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পথ কিছুটা মসৃন হতে পারে।
৩. ব্যবসায়ে সুযোগ তৈরি না হওয়া
বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধা তৈরি না হওয়ার কারনে অনেক উদ্যোক্তাই ঝরে পড়ে। দেখা যায় ভালো আইডিয়া কিংবা ভালো প্রোডাক্ট থাকা সত্ত্বেও অনেক ব্যবসায়ী সফল হতে পারছেন না। ব্যবসায়ে সুযোগ তৈরি হওয়ার একটা ব্যাপার আছে আবার সুযোগ তৈরি করারও একটা ব্যাপার আছে। একজন সফল উদ্যোক্তা সুযোগ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি তৈরি করার প্রতি বেশী মনোনিবেশ ।
৪. পরিচালনায় ব্যথর্তা
ব্যবসায়িক মনোভাব এবং ব্যবসায়ে পরিপক্কতা অর্জন খুব জরুরী বিষয়। অনেকেরই প্রচুর অর্থ ইনভেস্ট করার ক্ষমতা আছে কিন্তু একজন ব্যবসায়ী হিসেবে সেই অর্থ সঠিক ভাবে ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনা ব্যবসায়ের ভবিষৎ নির্মান করে। পরিচালক হিসেবে দক্ষ না হয়ে উঠলে ব্যবসা তার উদ্দেশ্য হারাবে।
৫. তীব্র প্রতিযোগিতা
বর্তমান মার্কেটপ্লেসে তীব্র প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে টিকে থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে একজন নতুন উদ্যোক্তাকে প্রথমেই মার্কেটপ্লেসে এসে হিমসিম খেতে হয়। এ জন্য মার্কেটিংয়ের আগে একজন উদ্যোক্তার মার্কেটপ্লেস সর্ম্পকে সম্যক ধারণা নিয়ে নিজস্ব মার্কেটিং পলিসি নির্ধারণ করে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
৬. কৌশলী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব
ব্যবসায়ে অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। একটি মাত্র সিদ্ধান্তই একটি ব্যবসাকে সর্বোচ্চ সফলতায় নিয়ে যেতে পারে আবার ব্যর্থতায় পর্যভূষিত করতে পারে। সে ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার ব্যবসায়ে কৌশলী হওয়ার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৭. অনভিজ্ঞ সহকর্মীর পাওয়া
ব্যবসায়ে সহকর্মী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন অনভিজ্ঞ সহকর্মী ব্যবসায়ে শুধু অকার্যকরই নয় বাঁধা। সে ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ, পরিশ্রমী, সৎ সহযোগি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৯. যথেষ্ঠ মার্কেটিং জ্ঞান না থাকা
বর্তমান মার্কেটপ্লেসে টিকে থাকতে একজন উদ্যোক্তার যথেষ্ঠ মার্কেটিং জ্ঞান থাকা আবশ্যক। টার্গেট মার্কেট, মার্কেটিং স্টাফ, মার্কেটিং মাধ্যম নির্ধারণ এবং প্রতিনিয়ত মার্কেট বিশ্লেষণ করে রিয়েল মার্কেটিং ডেভলপ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১০. ধৈর্যচ্যুত হওয়া
সবচেয়ে ধৈর্যচ্যুত হওয়ার বিষয়টি একজন নতুন উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে অনেক বেশী লক্ষ্যনীয়। উদ্যোক্তা মাত্রই সে উদ্যমী এবং প্রথম অবস্থায় তাকে নানান অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু দেখা যায় অনেকেই প্রাথমিক ভাবে কোন হোঁচট খাওয়ার পর মনোবল হারিয়ে ব্যবসায়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অথচ এই হোঁচটাই তার জন্য ছিল শিক্ষনীয়। ধৈর্য সহকারে প্রতিটি ব্যর্থতাকে কাটিয়ে সাফল্যের পথে হাঁটাই একজন প্রকৃত উদ্যোক্তার পরিচায়ক।
মূলত একটি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক স্থিরতার উপরও অনেকাংশে উদ্যোক্তার উপযোগি পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত হয় তাছাড়া আন্তর্জাতিক পরিবেশও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য একজন উদ্যোক্তা অনেক বেশী বিচক্ষণ হতে হয়। চারপাশের ব্যবসায়িক পরিবেশ বুঝে তাকে এগিয়ে যেতে হয় তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে।
COLLECTED
Diamu Blog Team