” শূন্য থেকে সেরার কাতারে হোস্ট মাইট “
একক প্রচেষ্টায় দেশের ডোমেইন ও হোস্টিং ব্যবসায় প্রথম কাতারে এসেছে হোস্ট মাইট।
হোস্ট মাইটের শুরুটা ছিল আর দশটা উদ্যোগের মতো সাদামাটা। অন্য সব আনকোড়া উদ্যোক্তার মতো এটির রূপকার জোবায়ের আলম বিপুল শুরু করেছিলেন শূন্য হাতে। ছোট ছোট পদক্ষেপে পার হয়েছেন এক একেকটি পর্যায়। নানা প্রতিকূলতা ও বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে পৌঁছেছেন আজকের অবস্থানে।
কলেজ জীবনে একটি ওয়েবসাইট তৈরির মাধ্যমে যে স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছিলেন তা এখন পরিণত হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানে। এখনও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি না টানলেও তরুন এ উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠানটি উঠে এসেছে দেশের ডোমেইন ও হোস্টিং জগতের শীর্ষ তালিকায়। পাশাপাশি ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজও করছেন সফলভাবে।
ইন্টারনেট প্রেম থেকে শুরু
ছোটবেলা থেকে ইন্টারনেটের প্রতি আলাদা একটা টান ছিল বিপুলের। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে, অভিভাবককে ফাঁকি দিয়ে সাইবার ক্যাফেতে ঢু দিতেন নিয়মিত। একটি ওয়েবসাইট তৈরি হয় কিভাবে সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে তার মনে। এ জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের বেশিরভাগ সময় তিনি গুগলে সার্চ করে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়তেন ও টিউটোরিয়াল দেখতেন। ডোমেইন ও হোস্টিং বিষয়গুলো সম্পর্কে তখন জানতে শুরু করেন। কম খরচে ওয়েবসাইট তৈরি এবং ডোমেইন ও হোস্টিং বিক্রির বিজ্ঞাপনও দেখতেন মনোযোগ সহকারে। স্কুল জীবনের সেই সময়ে অনেকের সাথে ফোনেও কথা বলতেন। কিন্তু টিফিনের টাকা দিয়েতো আর ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় না! তাই তখন কিছুটা হলেও দমে গিয়েছিলেন।
স্কুল জীবন শেষে ভর্তি হন কলেজে। পড়াশোনার পাশাপাশি ওয়েবসাইট তৈরির ভূত তার মাথায় তখনও রয়ে গেছে। অবশেষে পড়াশোনার খরচ বাঁচিয়ে কয়েক মাসের জমানো টাকা দিয়ে তৈরি করে ফেলেন একটি ওয়েবসাইট। এ সময় আবার নতুন করে ডোমেইন ও হোস্টিং ব্যবসা নিয়ে মনোযোগী হন। এবার তার মাথায় ঢুকে এ ব্যবসা শুরুর পোকা। শুরু করেন ফান্ড কালেকশন। যাত্রা শুরু হয় একটি নতুন অধ্যায়ের।
শুরু হলো পথচলা
অবশেষে জমানো টাকা দিয়ে ২০১০ সালে ‘ওয়ান আইটি বিডি’ নামে সীমিত আকারে ডোমেইন ও হোস্টিং ব্যবসা শুরু করেন বিপুল । শুরুটা ছিল অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে রিসেলারশিপ নিয়ে। একাগ্রতা ও ক্লায়েন্ট সাপোর্ট ভালো থাকায় গ্রাহকদের থেকে বেশ সাড়া পান। বেশ কিছু ভালো গ্রাহকের সুবাদে নিজেই এবার সার্ভার কিনে নেন। ২০১১ সালের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কাজ করার লক্ষ্যে ‘হোস্ট মাইট’ নাম নিয়ে পুরোদমে ব্যবসা শুরু করেন। প্রচারণার জন্য বিভিন্ন ব্লগ এবং ওয়েবসাইটে পেইড মার্কেটিং শুরু করেন। ফলে দেশে এবং দেশের বাহিরে গ্রাহক বাড়াতে থাকে।
পেমেন্ট নিয়ে প্রতিবন্ধকতা
ব্যবসা এগিয়ে চললেও পেমেন্ট সিস্টেমে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। দেশে পেপ্যাল না থাকা এবং আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের সহজলভ্যতা না থাকায় প্রতি মাসে সার্ভার বিল দিতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হতো বিপুলের। তিনি জানান, ‘এই সমস্যা সমাধানে অস্টেলিয়া প্রবাসী এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার পেমেন্ট দেওয়া হয়েছে।’ অবশেষে নিজের ক্রেডিট কার্ড হওয়ায় সেই প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাড়ছে পরিসর
নিজের কাজে সম্পূর্ণ ডেডিকেটেড থাকায় পিছু হটতে হয়নি হোস্ট মাইটের। প্রথম তিন বছর অনলাইন ও হোম সার্ভিসের মাধ্যমে কার্যক্রম চালালেও চলতি বছরে ঢাকার নিকুঞ্জতে নিজস্ব অফিস নিয়েছেন বিপুল। আর সেবা দিতে দু’জন কর্মীও নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমানে আরও লোক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে তার বলে জানান।
অনলাইনেই প্রচারণা
ডোমেইন, হোস্টিং, ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট ব্যবসা মূলত অনলাইননির্ভর। তাই অনলাইন প্রচারণায় বেশি গুরুত্ব দেয় হোস্ট মাইট বলে জানান বিপুল। এ ক্ষেত্রে বাংলা ব্লগ সাইট, ফেইসবুক বিজ্ঞাপন, ফেইসবুক গ্রুপকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
বিদেশেও সমুজ্জল হতে চায় হোস্ট মাইট
প্রতিষ্ঠানটিকে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে কাজ করছেন বিপুল। সেবার মান উন্নত করার পাশাপাশি দেশের বাইরের গ্রাহকদের সংখ্যা বাড়াতে কাজ করছেন তিনি। এ ছাড়া ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্টের কাজও শুরু করেছেন। বিদেশে সেবার পরিসর বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে চায় হোস্ট মাইট।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
যে কোনো ব্যবসায় সফল হতে হলে প্রয়োজন ‘ডেডিকেশন’ এবং ‘ইচ্ছা শক্তি’ এটাই মনে করেন তরুন উদ্যোক্তা বিপুল। তার মতে হোস্টিং ব্যবসায় আসতে হলে হোস্টিং সার্ভিস, ওয়েব সার্ভার সম্পর্কিত ভাল জ্ঞান থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় জিনিস হল সাপোর্ট। এবং এটা দিতে হয় ২৪ ঘন্টাই। নিজের অনুপস্থিতেও ক্লায়েন্ট সাপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এগুলো মাথায় রেখে যে কেউ হোস্টিং ব্যবসায় আসতে পারেন। তবে সহজ হবে যদি কম্পিউটার সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড পড়াশোনা এবং ভাল প্রযুক্তি জ্ঞান থাকে।
নিজের সম্পর্কে
বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে স্নাতকে পড়াশোনা করছেন বিপুল। পাশাপাশি হোস্ট মাইটের ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বতো রয়েছে। স্নাতক শেষে এমবিএ করতে চান তরুন এ উদ্যোক্তা।
(Collected)
Diamu Blog Team