” অনলাইন ডাকঘর সেবায় পথিকৃত ই-কুরিয়ার “

ecourier team diamu

কয়েকটা চাকরি বদলে অবশেষে নিজেই শুরু করেছেন ব্যবসা। অনলাইনের মাধ্যমে কুরিয়ার সেবার ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নেমেছেন। শুরুর প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চান ই-কুরিয়ারের উদ্যোক্তা বিপ্লব ঘোষ।

 

বরিশালের ছেলে বিপ্লব ঘোষ রাহুল উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে। চাকরি করেছেন একটি মোবাইল কোম্পানির কাস্টমার সার্ভিস বিভাগে। এরপর চেষ্টা করেছেন সফটওয়্যার ব্যবসার। বন্ধুদের সঙ্গে মিলে সে উদ্যোগে সফলতা না আসায় আবার চাকুরি নেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসে (বেসিস)। আইসিটি মন্ত্রণালয়েরও কাজ করেছেন কিছুদিন। তবে তার মন পড়েছিল নিজে থেকে কিছু করার। অন্তরের ডাকে সাড়া দিয়ে আবার ঝুঁকি নিলেন নতুন কিছু করার। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে সফলতা পেয়েছেন ই-কুরিয়ারে।

অফিসের টাইমফ্রেমকে না

চাকরি করলেও বরাবর অফিসের নির্দিষ্ট টাইমফ্রেমকে মানতে পারেননি বিপ্লব। তাই সবসময় ভাবতেন নিজে কিছু করার। পারিবারিক ঐতিহ্য ব্যবসা হলেও সবাই বিপ্লবকে চাকরির পরামর্শ দেন। ব্যবসার কথা বলে কখনো পরিবার থেকে সমর্থন পাননি। এরপরও অফিসের বাধা ধরা সময়ে নিজেকে বেধে না রেখে নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে পথে নামলেন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কাস্টমার সার্ভিসের তিন বছরের পার্টটাইম চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে বিপ্লব ‘সার্ভিস মার্কেটিং’ ব্যবসায় নামলেন। অল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করলেন ‘কল সেন্টার’ সার্ভিসের কাজ। পাশাপাশি অন্য সার্ভিস মার্কেটিং টুলগুলো নিয়েও কাজ করতে থাকেন।

দেশে ২০১২ সালের দিকে ই-কমার্স জনপ্রিয় হতে থাকলে বিপ্লবও এ খাতে ভিন্ন কিছু করার চিন্তা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসকে নিয়ে আসলেন অনলাইনে। ৪/৫ মাস গবেষণা ও পরিকল্পনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করলেন। নাম দিলেন ‘ই-কুরিয়ার’।

শুরুটা যেভাবে

দুই বছর আগেও দেশের গ্রুপ ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো অনলাইনে সেবা নেওয়ার বিষয়ে ততটা সচেতন ছিল না। মিটিং, প্রেজেন্টেশন, প্রপোজাল পাঠানো, আইডিয়া শেয়ার করতে করতে কেটে গেল অনেকটা সময়। ধীরে ধীরে সাড়া পেতে লাগলেন। শুরুতে হাজারো প্রতিবন্ধকতা থাকলেও হতাশ হননি। উদ্যোমী এ তরুন পথ চলতে পরামর্শ নিয়েছে ‘চাকরি খুঁজবো না চাকরি দেব’ গ্রুপের উদ্যোক্তা মুনির হাসানের।

প্রথমে শুরু করেন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবা দেওয়ার। পাশাপাশি নিজেও এ ব্যাপারে ধারণা নেন দেশের বড় কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে কাজ করে তা থেকে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো আইটি নিয়ে বেশি ভাবে না। তাই তিনি আইটির ওপর ভিত্তি করে ই-কমার্স সেবা শুরু করেন।

প্রতিবন্ধকতা শুরু পরিবার থেকে

বিপ্লব জানান, প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিবন্ধকতা এসেছে পরিবার থেকে। পথে নামলে যেহেতু পথ চিনা যায়- তাই মনোকষ্ট থাকলেও এ যুদ্ধ জয়ে পরিবারের বড় এ সন্তান এগিয়েছেন মনোবলকে সঙ্গী করে। সঙ্গে ছিল বিনিয়োগজনিত সমস্যা। কুরিয়ার সার্ভিসে বড় ব্র্যান্ডের বৃহৎ প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও আইটিকে প্রাধান্য দেওয়ায় সে প্রতিবন্ধকতা ততটা জটিল হয়নি।

এগিয়ে যাওয়া

দেশের ১৬ কোটি মানুষকে ই-কুরিয়ারের সেবা পৌঁছে দিতে চান বিল্পব। জানেন একদিনে তা সম্ভব না। তাই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন। এখন শুধু ই-কমার্স কোম্পানিগুলোকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে ডেলিভারি অনেক বড় সমস্যা। কারণ দেশের জনগন অনলাইনের মাধ্যমে বেচাকেনায় এতটা আগ্রহী হয়ে ওঠেননি। এরপরও আশার আলো দেখছেন বিপ্লব।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো সার্ভিসের মাধ্যমে ভোক্তাদের সেবা প্রদান করছে, যার মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারছে। আর ভোক্তাদের সেবা প্রদানের বড় একটা জায়গা হচ্ছে ডেলিভারি সার্ভিস। আর এই সুযোগটি পাচ্ছে ই-কুরিয়ার। অন্যান্য কুরিয়ারের থেকে এটি আলাদা। কারণ ই-কুরিয়ারে রিয়েল টাইম ডেলিভারি আপডেট পাওয়া যায়। যা অনলাইনের মাধ্যমে চেক করা যায়। ডেলিভারির লেনদেনের হিসাব করা, রিপোর্ট তৈরি করা ইত্যাদি অনেক সুবিধা রয়েছে। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে ‘ই-কুরিয়ার’।

একই দিনে পণ্য ডেলিভারি

আট মাস গবেষনার পর ২০১৩ সালের আগস্টে যাত্রা শুরু করা ই-কুরিয়ারের বর্তমান অবস্থা ‘ভালো’ বলেই মনে করেন এ উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, “আমি ভালোটাকে মূল্যায়ন করি কাস্টমারের ফিডব্যাকের ভিত্তিতে। সেটি আশানুরুপ বলা চলে। সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও গ্রাহক হিসাবে পাচ্ছে ই-কুরিয়ার।”

রাজধানীর সকল জায়গায় এখন সেম ডে ডেলিভারি দিচ্ছে ই-কুরিয়ার। নেক্সট ডে ডেলিভারিও দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার বাহিরেও ‘নেক্সট ডে ডেলিভারি’ ডেলিভারি দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাহকদের ডেডিকেটেড কাস্টমার সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রচারণা

প্রচারনার ক্ষেত্রে এ মুহূর্তে এসএমএস মার্কেটিং, কল সেন্টার টেলিমার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংকে গুরুত্ব দিচ্ছের বিপ্লব। এ ছাড়াও ওয়ান টু ওয়ান মার্কেটিং করছেন তিনি। কয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজ দেওয়ায় সেগুলো নিজেরাও মার্কেটিং করছে। মার্চেন্টরাও ই-কুরিয়ারের মার্কেটিং করে দিচ্ছে।

ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছাতে চায় ই-কুরিয়ার

২০১৫ সালের মার্চের মধ্যে সব জেলায় ই-কুরিয়ারের শাখা ফ্র্যাঞ্চাইজ খোলার প্রত্যাশা করেছেন বিপ্লব। তিনি আশা করছেন ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সেবা দেওয়ার সামথ্য অর্জন করতে পারবেন। ফ্র্যাঞ্চাইজ সেবার মাধ্যমে প্রতিটি জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উদ্যোক্তা গড়ে উঠবে বলে আশা করেন তিনি। এ ছাড়া eCourier.com.bd এর মাধ্যমে যে কেউ চাইলে লোকাল অথবা ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ারকে ব্যবহার করতে পারবে ডেলিভারির জন্য।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ

যে কোনো উদ্যোগের জন্য উদ্যমী হতে হবে। বিশেষায়িত ব্যবসায় নামার আগে বাজার গবেষণা করতে হবে। মানবসম্পদ (এইচআর),ফাইনান্স ও অপারেশান বুঝতে হবে। অন্যদের অনুকরণ না করে নিজস্ব সৃষ্টিশীলতা কাজে লাগাতে হবে।

 

(Collected)

Diamu Blog Team

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Diamu.com.bd uses cookies to offer you a better browsing experience. By browsing our website, you agree to our use of cookies.